বড় বড় দালান থেকে ইমারত যাই বলা হোক না কেন? সকল কিছুই তৈরি হয় ছোট ছোট ইট থেকে। ছোট ছোট ইট একটি আরেকটির ওপর বসিয়ে তৈরি করা হয় উচ্চ দালান, বহুতল ভবন। যে কোনো ধরনের নির্মাণ স্থাপনা তৈরি করতে ইটের প্রয়োজন। আর এই সকল ইট তৈরি করা হয় মাটি দিয়ে ।
ব্যাঙের ছাতার মতো ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে এ সকল ইটভাটাগুলো । অনুমতিবিহীন এসব ইটভাটার কারণে ফসল ও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে ।
ইটভাটার কারণে পরিবেশদূষণ, ভূমির উর্বরতা হ্রাস ও বন উজাড় হচ্ছে। কৃষিজমি দিন দিন কমছে। ইটভাটাতে মাটির জোগান দিতে ফসলের জমি অকেজো গর্তে পরিণত হচ্ছে। কেবল সমতল ভূমি নয়, কোথাও কোথাও পাহাড় পর্যন্ত কাটা হয় ইটভাটার মাটি জোগাড় করার জন্য।
ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এতে ভাটার আশপাশের এলাকা, নদী, শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই পার্শ্ববর্তী নদী বা জলাশয়ে নিষ্কাশিত হয়। ওই বর্জ্য পানিতে মিশে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলের দ্বারা মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ অনুযায়ী বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কৃষিজমিতেও কোনো ইটভাটা বৈধ হিসেবে গণ্য হবে না।
আর ইটভাটায় ফসলি জমির উপরের মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করলে প্রথমবারের জন্য দুই বছরের কারাদন্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের জন্য ভাটা কর্তৃপক্ষকে ২ থেকে ১০ বছরের জেল এবং ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করলে এক বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। কিন্তু এখনো আইন বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। ফলে ইটভাটার আগ্রাসনও বন্ধ করা যাচ্ছে না।
আইনে যেখানে কারাদন্ডের ও জরিমানার বিধান রয়েছে, সেখানে দিনের পর দিন অবৈধ ইটভাটা কীভাবে চলছে- আমরা সেটা জানতে চাই, জনগণ জানুক । অভিযোগ আছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর যোগসাজশে এসব ইটভাটা চালানো হচ্ছে।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ইটের দরকার আছে, কিন্তু এ প্রয়োজন মেটাতে হবে আইন মেনে, যথাযথ নিয়ম মেনে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পরিবেশ আইন-২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন কেউ মানছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে না। ফলে আইনের কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে না। সারাদেশেই এর ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এজন্য জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি হয়ে পরছে বলে আমি মনে করি।
সবুজ মহন্ত
বিজয় এফএম